দ্য শেয়ার নিউজ ডেস্ক : চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির গত ২৩শে আগস্ট ২০২০ তারিখে বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তর্ভুক্ত ১৭১ পূজা কমিটিকে পত্র মারফত মতামত আহ্বান করা হয় যে, এই বছর নিম্নলিখিত কোন্ পদ্ধতিতে শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী মাতার পূজা অনুষ্ঠিত হবে :-
১) চিরাচরিত স্বাভাবিক উচ্চতা সম্পন্ন প্রতিমা।
২) প্রতিমা বিহীন ঘট পূজা।
৩) উপরোক্ত দুটি পদ্ধতি ব্যতীত নতুন কোনো মতামত।
মোট ১৬৪ টি পূজা কমিটি তাদের মতামত লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।উপরোক্ত বিষয়ে ১১৯ টি পূজা কমিটি ১ নং প্রস্তাবের পক্ষে অর্থাৎ চিরাচরিত স্বাভাবিক উচ্চতা সম্পন্ন প্রতিমা নির্মাণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত করার মতামত প্রদান করেন। ৩৩ টি পূজা কমিটি ২ নং প্রস্তাব অর্থাৎ ঘট পূজার পক্ষে এবং ১২ টি পূজা কমিটি ৩ নং প্রস্তাব অর্থাৎ নতুন বিকল্প মতামত লিখিত ভাবে জানান।
বিশ্বব্যাপী অতিমারি করোনার জন্য আমাদের দেশ, রাজ্য তথা প্রিয় শহরের স্বাভাবিক জীবন-যাপন অতিমাত্রায় ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মৃত্যু যেমন অত্যন্ত হারে কমেছে তার বিপরীতে সুস্থতা অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সরকার ও প্রশাসন ধীরে ধীরে জীবন যাপনে স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং করোনাকালে বিপর্যস্ত অর্থনীতি কে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। এইরূপ পরিস্থিতিতে জগৎখ্যাত জগদ্ধাত্রী পূজা, বলাবাহুল্য পূজা শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করছে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি পরিবার। কারণ এই পূজা শিল্পের সাথে মৃৎশিল্পী, সাজসজ্জা শিল্পী, আলোকশিল্পী, ডেকরেটার্স, সাউন্ড বক্স ব্যবসায়ী, ঢাকি, দশকর্মা ব্যবসায়ী, পুরোহিত, ফল-ফুল ব্যবসায়ী, লরি ও তার ড্রাইভার-খালাসী থেকে শুরু করে ছোট বড় মেলা ব্যবসায়ী তৎসহ ছোট পরিবহন ব্যবসায়ী সকলেই যুক্ত। অতএব এই মন্দার বাজারের অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করবে চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পূজা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে, করোনা অতিমারিকালে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি পরিবার সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে ১৭১ টি পূজা কমিটির পক্ষে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা এবং চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের বহু জগদ্ধাত্রী পূজা বারোয়ারি পৃথক-পৃথক ভাবে, মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে অর্থ সাহায্য করেছে।
বর্তমানে করোনার ক্ষয়িষ্ণুতাকে হাতিয়ার করে সমস্ত রকম স্বাস্থ্যবিধি কে মান্যতা দিয়ে আমাদের শহরের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছেন তা শহরের রাস্তাঘাট, বাজার-হাট ও পরিবহন ব্যবস্থার চিত্র দেখেই বোঝা যায়। সে ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি পালন করে প্রশাসনিক অনুমতি গ্রহণ করে নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে পূজা অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা সকলে ব্রতী হব।
আজ ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত পূজা কমিটির প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের ঐতিহ্যমণ্ডিত জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পর্কে মানুষের ভাবাবেগ এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতি উভয়ই বিবেচনা করে ‘২০ সালের শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী মাতার পূজার রুপরেখা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনান্তে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় :-
১) যেসকল পূজা কমিটি প্রতিমা সহকারে পূজা আয়োজনে ইচ্ছুক তাঁরা বারোয়ারির স্থায়ী কাঠামোয় মাতৃ প্রতিমা নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত আড়ম্বরহীন পূজা অর্চনাদি আয়োজন করবেন। এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে মৃৎশিল্পীদের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত করা হবে।
২) যে সকল পূজা কমিটি স্বাভাবিক উচ্চতা সম্পন্ন পূজা আয়োজনে অনিচ্ছুক, তাঁরা স্থায়ী কাঠামোয় জগদ্ধাত্রী মাতার প্রতিচ্ছবি ফ্লেক্স স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিমা বিহীন ঘট পূজা আয়োজন করবেন।
৩) বিশ্ববন্দিত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার ঐতিহ্যের পরিপন্থী, প্রতিবছর পূজিত হওয়া স্থায়ী কাঠামোকে ব্রাত্য করে পৃথক একটি প্রতিমা অর্থাৎ ছোট ঠাকুর নির্মাণের মাধ্যমে পূজা আয়োজন করা হবে না।
৪) প্রশাসনিক অনুমতি গ্রহণ করে সরকারি স্বাস্থ্য বিধিকে মান্যতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব পূজার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।
৫) যথা সম্ভব তিন দিক উন্মুক্ত বড় পরিমাপের আসর যুক্ত মন্ডপ নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিমা দর্শন এর ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে পরবর্তী সময়ে ডেকোরেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত করা হবে।
৬) প্রতিমার সম্মুখস্থ স্থানে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পুরোহিত ও তাঁর সহযোগীদের পূজা অর্চনাদি পালন করতে হবে।
৭) পূজার দিন গুলিতে পূজা স্থল তথা মন্ডপ প্রতিদিন স্যানিটাইজেশন এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং মাস্কবিহীন অবস্থায় পূজামণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮) পূজার দিনগুলিতে মানুষ ও যানচলাচলের জন্য পথ উন্মুক্ত রেখে আলোকসজ্জা প্রদর্শন করা যেতে পারে।
৯) সমাজের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থে পূজা কমিটি গুলিকে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্মসূচি পালন করতে হবে।
১০) ‘২০ সালের জয়ন্তী বর্ষ পালনকারী পূজা কমিটিগুলি, আগামী বছর ‘২১ সালের জয়ন্তী বর্ষ পালনকারী পূজা কমিটিগুলির সাথে, তাদের জয়ন্তী বর্ষ পালনের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করার সুযোগ পাবেন যদি আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।
১১) পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূজা পালনের ও প্রতিমা নিরঞ্জনের সম্পূর্ণ গাইড লাইন প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সত্ত্বর প্রকাশ করা হবে।
শুভজিৎ সাউ (সাধারণ সম্পাদক)
শ্যামল কুমার ঘোষ ও দেবব্রত বিশ্বাস (যুগ্ম সম্পাদক)
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.