দ্য শেয়ার নিউজ ডেস্ক : চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্র। আপাতদৃষ্টিতে, পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে এটাও একটি। কিন্তু, চাঁপদানির স্থানীয় মানুষ বলেন, এই একটা বিধানসভা কেন্দ্র দেখেই গোটা ভারতকে বোঝা সম্ভব। এ যেন ঠিক ভারত দেশেরই একটা ছোট্ট সংস্করণ। এখানে, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিষ্টান নির্বিশেষে থাকেন বছরের পর বছর ধরে। বৈচিত্রের মধ্যে এক্যৈর এক আদর্শ উদাহরণ বলা যেতে পারে চাঁপদানিকে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন হুড়মুড়িয়ে এসে পড়লো বলে। কয়েকদিন পরেই প্রকাশ করা হবে সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকা। তার আগে কী ভাবছেন এলাকার স্থানীয় মানুষেরা? সেই কথাই জানতে গিয়েছিল দ্য শেয়ার নিউজের প্রতিনিধি। কী কী দরকার রয়েছে এই বিধানভা কেন্দ্রে? প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁদের। উত্তর তুলে ধরছি তারই।
গত ৭০ বছরে চাঁপদানি বিধানসভায় কোনওবারই কোন দক্ষিণপন্থী দল থেকে কোনও স্থানীয় মানুষকে প্রার্থী করা হয়নি। এমনটাই জানাচ্ছিলেন জনৈক বয়স্ক এবং রাজনৈতিকমনস্ক মানুষ। তাঁর কথা অনুযায়ী, তৃণমূল গঠন হওয়ার পর একবারই নাকি কাজল চক্রবর্তী প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও তিনি জিততে পারেননি। তাই যত বিধায়কই এতদিন ধরে এখানে ছিলেন বা রয়েছেন তাঁদের কেউই স্থানীয় এবং দক্ষিণপন্থী দলের নন।
বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও ঘটনার তেমন কোনও ব্যতিক্রম নেই। কারণ, সুনীল সরকার ছিলেন বিধায়ক। তাঁর বাড়ি ছিল বর্ধমান। পরে অবশ্য চাঁপদানিতে থাকতেন। একাধিকবারের (মোট ৫ বার) বিধায়ক আবদুল মান্নান সাহেবও খানাকুলের বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে তিনিও নাকি শ্রীরামপুরের ভোটার। মুজাফফর খানের বাড়িও কলকাতায়। একটা এত প্রাচীন শহর। এই শহরের পৌরসভার বয়স দেড়শো বছর। শ্রীচৈতন্য দেব তো এখান থেকেই গঙ্গাস্নান করে গিয়েছিলেন। তখনও তিনি ছিলেন ‘নিমাই’। তাই তো ‘নিমাই তীর্থ ঘাট’ শেওড়াফুলি বাজারের বয়সটাও প্রায় তিনশো বছর হতে চললো। তা সত্বেও স্থানীয় বিধায়ক না পাওয়ার জন্য এই অঞ্চলের উন্নতি যতটা হওয়া উচিত ছিল, ততটা আর হয়নি। এমন দাবি অনেকেরই।
কী কী দরকার এই চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষদের? জানতে চাইলাম। অনেকেই বললেন, পুরনো শহর এত। কত উন্নতি হতে পারতো। অথচ, আজও অগোছালো হয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও চাঁপদানি বিধানভা অঞ্চলে কোনও কলেজ নেই। না রয়েছে কোনও ভাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানকার ঘাট হয়েই পূণ্যার্থীরা রওনা দেন তারকেশ্বরের উদ্দেশ্য। অথচ, এখানে ভাল কোনও অতিথিশালা তো নেই-ই। কাপড় বদলানোরও ভাল ব্যবস্থা নেই। মহিলা শৌচাগার যদিও বা রয়েছে। কিন্তু পুরুষদের জন্য নেই কোনও ব্যবস্থা। এত লোকের সমাগম হয় যেখানে। সেখানে নেই কোনও বিশ্রামাগার! ভৌগলিকভাবে এই শহরের একদিকে রয়েছে গঙ্গা। একদিকে জিটি রোড। অন্যদিকে দিল্লি রোড। তা সত্বেও দুটো রেলগেটের জন্য মানুষকে কতটা সময় আটকে পড়তে হয়। কোনও রোগীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই রেলগেটের জন্য। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট আটকে থাকতে হবে। যদি অগ্নিকাণ্ড হয়, তাহলে কী হবে? ভাবলেই শিউরে উঠছেন তাঁরা। আজকের দিনেও একটা ফ্লাই ওভার কেন হল না? প্রশ্ন অনেকের।
স্থানীয় কেউ বিধায়ক হলে, তিনি অন্তত এগুলো বুঝতে পারতেন। সুরাহাও হতো চাঁপদানির মানুষের। কিন্তু, স্থানীয় কোনও তেমন লোক রয়েছেন? যিনি চাঁপদানির উ্ন্নতি করতে পারতেন? ভিড়ের মধ্যে থেকেই উত্তর এলো অজয় প্রতাপ সিং হতেই পারেন। কেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তরে জবাব এল, তিনি স্থানীয় মানুষ। এই এলাকাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। একটা আবেগ কাজ করবে নিজের জায়গার প্রতি। বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন সেই দায়িত্ব। তাঁর সময়ে পুরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিল। কিন্তু, তিনি সরে যেতেই আবার যে কে সেই। এছাড়া অজয় প্রতাপ সিং, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও স্নেহধন্য। সে তো বোঝা গেল। কিন্তু, এলাকার ভোটারদের চাহিদার কথা কবে আর রাজনৈতিক দলগুলো ভেবেছে বা শুনেছে। তার উপর আবার স্থানীয় বাসিন্দাকে প্রার্থী হিসেবে পাওয়ার মতো এত বড় স্পর্ধা ভোটারদের হয় কীভাবে? হয়তো এমনই ভাববে এবারও রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু, তৃণমূল তো পরিবর্তন এনেছিল এই রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম সরকারকে হঠিয়ে। তাহলে তারাই বা কেন এবারও ভাববে না, ৭০ বছর ধরে কেন স্থানীয় মানুষকে এলাকায় প্রার্থী হিসেবে না দাঁড় করানোর কথা। রাজ্যের পরিবর্তন তো দশ বছর আগে হয়েছিল। চাঁপদানির লক্ষ লক্ষ মানুষদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটুকু ভাবতে পারবেন না? উত্তর সময় দেবে। হয়তো সেই উত্তর এবারও ‘ভুল’ হবে। আর ঠিক হলে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাণভরে আশির্বাদ করবেন চাঁপদানির ভোটাররা। এই উপলব্ধিই হল চাঁপদানির মানুষের সঙ্গে কথা বলে।
Leave A Comment
You must be logged in to post a comment.