দ্য শেয়ার নিউজ ডেস্ক : প্রায় ৯ মাস হয়ে গেলেও করোনা অতিমারীর জেরে এখনও বিধ্বস্ত আমাদের দেশ সহ গোটা দুনিয়া। কিন্তু কালের নিয়মে উৎসব তার সময় মতো চলে আসছে। সদ্য কিছুদিন আগেই গিয়েছে বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। বাঙালি বোধহয় এমন দুর্গাপুজো আগে কখনও দেখেনি। এভাবে নমো নমো করেও যে দুর্গাপুজোর মতো উৎসব পালন হতে পারে, তা কল্পনারও অতীত ছিল বোধহয়। দুর্গাপুজোর পর একে একে এসেছে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো। তাও হয়েছে শুধু নিয়মরক্ষার স্বার্থেই। তেমনভাবেই এই জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দ বা স্বাদ বিশেষ করে শেওড়াফুলি থেকে চন্দননগরের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে থাকে। দেখতে গেলে জগদ্ধাত্রী পুজো এককথায় আঞ্চলিক একটি উৎসব। কিন্তু এর জাঁকজমক কিংবা মাহাত্ম্য এতটাই বেশি যে, এই জগদ্ধাত্রী পুজো হুগলীর মানুষের জীবনের সবথেকে বড় উৎসব হয়ে উঠেছে। কিন্তু এবার করোনার জের পড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর আনন্দেও। মানুষ ২০২০-র জগদ্ধাত্রী পুজো ভুলতে পারবেন না। জগদ্ধাত্রী পুজো যে এমনও হতে পারে, তা কোনওদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি হুগলীর মানুষ। ভাঁটা পড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোর চেনা এবং চিরাচরিত ছবিতে। নেই সেই ভিড়। নেই কোনও থিম। নেই সেই রকমারি চোখ ধাঁধানো লাইটিং কিংবা বিশাল বিশাল পুজো প্যান্ডেল। দীর্ঘদিনের পুজো হোক কিংবা সদ্য কয়েক বছর শুরু হওয়া জগদ্ধাত্রী পুজো। ছবি সেই একই। ম্রিয়মান।

এই বছর ২৬ তম বর্ষে পড়ল শেওড়াফুলির দি নোনাডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো। বৈদ্যবাটি পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান এবং এই ক্লাবের সভাপতি এবং এই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা শ্রী অজয় প্রতাপ সিং। অতিমারীর জের কতটা পড়ল তাঁদের এই এত বছরের পুজোয়? ক্লাবের সভাপতি শ্রী অজয় প্রতাপ সিং জানালেন, করোনা অতিমারীর জেরে তাঁদের এবারের জগদ্ধাত্রী পুজোতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে, পুজোর নিয়মে কোথাও কাটছাঁট করেননি তাঁরা। পঞ্চমীর দিন তৃণমূল সাংসদ শ্রী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ফিতে কেটে পুজোর উদ্বোধন করেন। হয় কুমারী পুজোও। ঠাকুরের কাঠামো যেহেতু একই থাকে অর্থাৎ স্থায়ী, তাই প্রতিমার আকারে কোনও ছেদ পড়েনি। তবে, গত ২৬টা বছর ধরে যেমন পুজোর চারদিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, তা এবার বাদ দিতে হয়েছে,যাতে কোনওভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। তাছাড়া নবমীর দিন হয় নরনারায়ণ সেবাও। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগনকে বসিয়ে খাওয়ানো হয়নি। তবে, খাবারের প্যাকেট পৌঁছে গিয়েছে মানুষের হাতে হাতে। এসবই করোনার সুরক্ষা বিধি মেনে।

দি নোনাডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোর স্মৃতিচারনা করছিলেন বৈদ্যবাটি পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান এবং ক্লাবের সভাপতি শ্রী অজয় প্রতাপ সিং। জানাচ্ছিলেন, ২৬ বছর আগে ৫-৬ জন মিলে শুরু করেন পুজোটা। পুজোর সময় চার দিন ধরে এলাকারই মানুষদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। আসত বিখ্যাত অর্কেষ্ট্রাও। পুজোর চারদিন এলাকার মানুষরা জমিয়ে রাখেন। আনন্দে মেতে থাকেন। এলাকার মানুষ মুখিয়ে থাকেন এই জগদ্ধাত্রী পুজোটার জন্য। নোনাডাঙার বাসিন্দারা এবং শেওড়াফুলির একটা বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষদের ভালোবাসাতেই এতদিন ধরে পুজোটা চলে আসছে। তিনি আরও জানাচ্ছেন, নোনাডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের এই জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সেলিব্রিটিও এসেছেন। বর্তমান তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান থেকে শুরু করে পায়েল সরকার, সোহম চক্রবর্তী, পাপিয়া অধিকারী, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এছাড়া বিভিন্ন বড় বড় তারকারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন, প্রয়াত সাংসদ আকবর আলি খন্দকার, কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কখনও সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কখনও বেলুড় মঠের প্রধান স্বামীজিও এই পুজো উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু এই বছর করোনা বিধির কারণে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় মানুষ বেশ হতাশই হয়েছেন। অতিমারীতে মানুষ যাতে আরও সুরক্ষিত থাকে, তাই দি নোনাডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের পক্ষ থেকে এই বছর পুজোর দিনগুলোয় মাস্ক বিলি করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় কাজ। এই বছর ভোগ বিতরণও হয়েছে প্যাকেট করে যাতে, কোনও সংক্রমণের প্রশ্ন না থাকে। দি নোনাডাঙা অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রধান বৈশিষ্ঠই হচ্ছে চন্দননগরের বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী বাবু পালের তৈরি প্রতিমা। গত ২৬ বছর ধরে তিনিই প্রতিমা তৈরি করছেন। পুজোও হয় সাবেকি। এছাড়া বর্ধমানের রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিতরাই গত ২৬ বছর ধরে পুজো করে আসছেন। বিজয়া দশমীতেও মেনে চলা হয়েছে সমস্ত প্রশাসনিক নির্দেশ এবং করোনা বিধি। বৈদ্যবাটি পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান এবং ক্লাবের সভাপতি শ্রী অজয় প্রতাপ সিং জানালেন, সামনের বছর করোনার অতিমারীর জের না থাকলে, তাঁদের জগদ্ধাত্রী পুজো আরও জাঁকজমক করে হবে।